Home»   » জীব‌নের প্রথম একা রাজশাহী ভ্রমনের-অন্যরকম অনুভূ‌তি!

জীব‌নের প্রথম একা রাজশাহী ভ্রমনের-অন্যরকম অনুভূ‌তি!

জাগো লাইভ ডেক্স: এক বি‌শেষ কা‌জে শুক্রবার রাত ৯ টা ১৫ মি‌নি‌টে ঢাকা কল্যাণপুর থে‌কে রাজশাহী, বা‌নেশ্বরের উ‌দ্দ্যে‌শে হা‌নিফ এন্টারপ্রাইজে আল্লাহর ওপ‌র ভরসা রে‌খে রওনা হয়।

 

ঢাকা থে‌কে রাজশাহীর দূরত্ব  হল ২৭২ কি.‌মি. ।

 

যানজ‌টে গা‌ড়ির চাঁকা স্থীর হ‌য়ে দাড়ায় হটাৎ হট‌াৎ। রাত ২ টা ৫০ শে, অ‌ভি হাইও‌য়ে রেষ্টু‌রে‌ন্ট, সিরাজগ‌ঞ্জে যাত্রা বিরতী দি‌লো। গা‌ড়ি থে‌কে নে‌মে একটু মুখ-মন্ডল ওয়াশ ক‌রে খাবার টে‌বি‌লে ব‌সি। পে‌টে খিদা আ‌ছে কিন্তু কোন‌ কিছু খাওয়ার রু‌চি নেই। ক‌য়েক‌দিন থে‌কে টানা র্নীরঘুম ও দীর্ঘ জার্রনিতো চল‌ছেই। তাও হালকা ফাষ্টফুড নাস্থা করলাম। বিরতী শে‌ষে আবার গা‌ড়ি ছু‌টে চল‌লো।

 

এ‌দি‌কে একটা অপ‌রি‌চিত জায়গ‌ায় একাই ও আবার রাতে যা‌চ্ছি। তাই ম‌নে নানা রকম শঙ্কা  কাজ কর‌ছে।

 

না‌টোরে আসার একটু আ‌গেই পার্শ্বের সি‌টে -বসা ভদ্র‌লোক বল‌লো, পু‌ঠিয়া কি পার হ‌য়ে আস‌ছি? আ‌মিইতো এই এলাকার কোন‌কিছুই চি‌নিনা। তাও আনদা‌যে বললাম না এখ‌নো আ‌সি‌নি।

 

একটু পরে ওই ভদ্র‌লোক পু‌ঠিয়ায় নে‌মে গেল। আর আ‌মি সাম‌নের পা‌নে তা‌কি‌য়ে থাকলাম। এ‌দি‌কে চোখে প্রচুর ঘুম পে‌য়ে‌ছে কিন্তু এখ‌ন ঘুমাই পড়‌লে আর হয়‌তো আ‌মি স‌ঠিক স্থা‌নে নাম‌তে পার‌বো না। তাই ঘুম‌কে হার মা‌নি‌য়ে অব‌শে‌ষে রাত ৩টা ৫০শে বা‌নেশ্বার ট্রা‌ফিক মো‌ড়ে নামলাম।

 

জীব‌নের প্রথম একা রাজশাহী ভ্রমনের-অন্যরকম অনুভূ‌তি মিলুর

 

যে বি‌শেষ কার‌ণে আমার রাজশাহী আসা সে কার‌ণের জন্য একটু প‌রে একজন‌কে ফোন করে বললাম যে, আ‌মি বা‌নেশ্বা‌রে চ‌লে আস‌ছি। সেই  মানুষ‌টি তখন ঘুম থে‌কে ও‌ঠেই‌নি। এ‌দি‌‌কে রা‌তে বঙ্গবন্ধু স্যা‌টেলাই‌টের উৎ‌ক্ষেপণ এর সরাস‌রি অনুষ্ঠান মোবাই‌লে দে‌খে মোবাই‌লের চার্জও শেষের দি‌কে। ট্রা‌ফিক মো‌ড়ের পা‌র্শ্বে নিরালা রেষ্টু‌রেন্ট ও হো‌টেল খোলা দেখলাম ও সেখানকার এক কর্মচারী আমা‌কে দূর থে‌কে দে‌খে খাওয়ার জন্য ডাক দি‌চ্ছে। সেখা‌নে গি‌য়ে ‘চা’ চাইলাম কিন্তু আমার কপা‌লে তখন ‘চা’ ছি‌লো না। হো‌টে‌লের একজন‌কে বললাম ভাই মোবাইল কি চা‌র্জে দেওয়া যা‌বে?

 

তি‌নি ব‌লেন চার্জার থাক‌লে চা‌র্জে দি‌তে পা‌রেন। চা‌র্জে কোথায় দি‌বো ‌সে স্থান‌টি জা‌নে নি‌য়ে চা‌র্জে লা‌গি‌য়ে দি‌য়ে আ‌মি তা‌দের একজন‌কে মোবাইল‌টি দে‌খে রাখার জন্য পা‌র্শ্বের চা‌য়ের দোকা‌নে গি‌য়ে চা খাইলাম। প‌রে আবার ওই হো‌টে‌লের সাম‌নে আ‌সে দাড়াই তখ‌নি হো‌টে‌লের একজন বল‌লো ভাই আমরাতো কা‌জে ব্যস্তথা‌কি তাই আপ‌নি নি‌জে ব‌সে থা‌কে আপনার ফোনটা চার্জ ক‌রে নেন।

 

নিরালা হো‌টে‌লে বাবুর্চী আ‌শিক (৩০) সা‌থে কিছু কথো-পক‌থোনে রাজশাহীর কিছু তর্থ্য নিলাম।

 

‌সেখানকার স্থানীয়রা জানান, সাধারণভাবে বলা হয়, এই জেলায় বহু রাজা -জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময়(১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। ১৯৮৪ সালে রাজশাহীর ৪টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ,নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত করা হয়।

 

এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতে রাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম।

 

অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহীবলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।

 

পদ্মার উত্তরাঞ্চল বিস্তৃর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়।

সেলফিতে ভ্রমনে মিলু

 

অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামেরসমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ‌ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীতে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে আমরা যে, রাজশাহী শহরের সঙ্গে পরিচিত, তার শুরু ১৮২৫ সাল থেকে। রামপুর-বোয়ালিয়া শহরের নামকরণ রাজশাহী কী করে হলো তা নিয়েও বহু মতামত রয়েছে।

 

রাজাশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’ শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই। অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বাদশাহ বাদশাহী। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্রুটি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী,ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি।

 

ঠিক তেমনিকরে অদ্ভূত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে।

 

স্থানীয়‌দের সা‌থে কথা ব‌লে রাজশাহীর বেশ‌কিছু জায়গায় ঘু‌ড়ে দেখলাম।

 

রাজশাহীর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান:

 

পদ্মা নদীর বাধ, পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা, বরেন্দ্র জাদুঘর, জিয়া পার্ক গার্ডেন, বাঘা মসজিদ।

 

সর্ব‌শে‌ষে ঘু‌রে যা দেখলাম ও বুঝলাম তা‌তে আমার ম‌তে, আস‌লে রাজশাহীর এক‌টি অন্যরকম সু-দর্শন স্থান ও সেখান কার মানুষ গু‌লো অত্যন্ত ভর্দ্র, নম্র ও অ‌ধিকাংশ মানুষ শি‌ক্ষিত।

 

আপনারা চাই‌লে সেই দর্শনীয় স্থানগু‌লো থে‌কে ঘু‌রে আস‌তে পা‌রেন। ঘুর‌লে অন্যরকম অনুভূ‌তি হ‌বে আপনারও।

 

 ‌মোঃ জা‌হিদ হাসান মিলু , জাগো লাইভের ঠাকুরগাঁও জেলা প্র‌তি‌নি‌ধি হিসেবে কমররত আছেন।