জাগো লাইভ২৪.কম | আপডেট: 3:01 PM, December 29, 2019
Home» » ১৯ নম্বর ওয়ার্ড গুলশান-বানানী উত্তরের সেরা ওয়ার্ড: মফিজুর
১৯ নম্বর ওয়ার্ড গুলশান-বানানী উত্তরের সেরা ওয়ার্ড: মফিজুর
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড গুলশান-বানানী উত্তরের সেরা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করতে চাই। এই ওয়ার্ডটি রাজধানীর একটি মডেল ওয়ার্ড হিসাবে রূপ নিতে ৮০% এর মধ্যে মাত্র ২০% কাজ বাকি রয়েছে, যা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আবারও যদি আমি জনগণের সেবা করতে পারি তাহলে গুলশান বনানীর চেহারা বদলে যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান।
মফিজুর রহমান প্রায় দেড় যুগ ধরে সুনামের সাথে এই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। রাজধানীর মধ্যে বর্তমান সবচেয়ে এই ওয়ার্ডটির নাগরিকেরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করে আসছেন। মফিজুর রহমান একই সঙ্গে ২টি দায়িত্বশীল পদে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। তার একটি পদবি হলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরেকটি পদবি হলো ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
বর্তমান সময়ে সরকারের চলমান উন্নয়ন, সুষ্ঠ নাগরিক পরিকল্পনা ও আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
মফিজুর রহমান বলেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডকে একটি মডেল ওয়ার্ড হিসাবে ঘোষণা করতে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০% কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আর ২০% কাজ বাকি আছে। এলাকাবাসীর কাছে শেষ চাওয়া। তারা যদি আমাকে আর একবার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে তাহলে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করে ১৯ নং ওয়ার্ডকে একটা মডেল ওয়ার্ড হিসাবে ঘোষণা দিতে চাই।
যেহেতু এই ওয়ার্ডের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তাই আমি ছাড়া অন্য যেকেউ আসলেও বাকিটা করতে তার কোনো সমস্যা হবে না। আমি দেখতে পারছি খুব শিগগিরই এটা একটা মডেল ওয়ার্ড হিসাবে ঘোষণা করা হবে। তার রূপরেখা ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে।
ফুটপাত ও মাদক মুক্ত করতে আপনি কতটুকু সফলতা অর্জন করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুর রহমান বলেন, মুখে বড় কথা বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। হকার পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এলাকায় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মাদক নির্মূল। যা দূর করতে পেরে স্বস্তিতে আছি। এলাকার সব কয়টি পার্ক ও খেলার মাঠ আধুনিকায়ন কাজ করা হয়েছে। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ফুটপাথ, ড্রেন এবং রাস্তার কাজও প্রায় সম্পন্ন। আবারও নির্বাচিত হলে এ ওয়ার্ডকে ডিজিটাল ও সবার বাসযোগ্য হিসাবে গড়ে তুলব। ১৯ নম্বর হবে উত্তরের সেরা ওয়ার্ড এটা আমার কামনা।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এই সভাপতি বলেন, আমার জীবনের ৪৭টা বছর এই এলাকায় কাটিয়েছি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে আছি। আমার জীবনের ইচ্ছা ছিল রাজনীতি অথবা ব্যবসা করা। ব্যবসায় আমি সফলতা না পেলেও রাজনীতির কারণে এ এলাকার মানুষের সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মিশতে পেরেছি। এবং এলাকার মানুষও বার বার আমাকে ভোট দিয়ে তা প্রমাণ করেছে।
আগামী নির্বাচনে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে ভাবি। কারণ আমি তো এখানে সারাজীবন থাকব না। আমার পরে কেউ না কেউ তো এখানে আসবেন। দায়িত্ব পালন করবেন। আজ না হয় কাল কেউ না কেউ তো সভাপতি বা কাউন্সিলর হবেন। আমার ভাগ্যে যে কয়দিন লেখা আছে সেই কদিন আমি দায়িত্ব পালন করব। জনগণ আমাকে যেভাবে রায় দিয়েছে। সে কদিন ইজ্জতের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করে যাব।
মফিজুর রহমান বলেন, এমন একটি সেনসেটিভ এলাকায় আমার মতো মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কাউন্সিলর হিসাবে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কোনো অভিযোগ ছাড়াই পার করতে পারছি। ১৭ বছর ধরে এই এলাকায় রাজনীতি করছি। ১২ বছর ধরে ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমার বিরুদ্ধে কেউ ক্যাসিনো কিংবা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিতে পারেনি। এই আমলে এটাই আমার ব্যক্তিগত বড় সফলতা এটা আমি চ্যালেঞ্জ সহকারে বলতে পারি। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া জানাই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি ঠিক সেভাবে তা পালন করার চেষ্টা করেছি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মধ্যে একমাত্র এই ওয়ার্ডে ৩ শ কোটি টাকার কাজ হয়েছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, এমন কাজ আর কোনো ওয়ার্ডে হয়েছে কেউ দেখাতে পারবে বা বলতে পারবে? এটা কূটনৈতিক পাড়া অভিজাত এলাকা। এখানে বিশিষ্টজনেরা বসবাস করে। সেই আলোকেই এটা আগে থেকেই সেজে উঠেছে। এ সফলতা শুধু আমার একার নয়, আগে থেকেই এ উন্নয়ন অব্যাহত।
এই ওয়ার্ড নিয়ে আগামীতে কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯ ওয়ার্ড লেক দ্বারা বেষ্টিত। লেক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। গুলশানের পূর্ব-পশ্চিম দুপাশে লেক। বনানীর পূর্ব-পশ্চিম পাশে লেক। টিএনটি কলোনির ও আদর্শ নগরের মাঝখানে লেক। যেহেতু লেক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এটা একটা দ্বীপ। লিংক হচ্ছে হাতিরঝিলের কাছে। বর্তমান নকশাতে আছে ৭টা ব্রিজ হবে। এখন এটা পরিবর্তন হয়ে ১১টা ব্রিজে রূপ নিচ্ছে। ১১টা ব্রিজ, লেকের পাশ দিয়ে ওয়াক-ওয়ে এবং কিছু দূরুত্বে গিয়ে বসার বা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে এবং দুপাশ দিয়ে ওয়ান ওয়ে রোড হবে। এক কথায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটা করা হচ্ছে সরকারের এমন উন্নয়নের কাজে অংশীদার হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।
আপনার ওয়ার্ডে একদিকে গুলশান বনানীর মতো অভিজাত এলাকা অন্যদিকে টিএনটি কলোনি ও আদর্শ নগরের মানুষের জীবন ব্যবস্থা। এই দুই শ্রেণির মানুষের সমন্বয় কীভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলশান-বনানী ও টিএনটি কলোনি-আদর্শ নগর নিয়েই ১৯ নং ওয়ার্ড। একদিকে বস্তি অন্যদিকে অভিজাত এলাকা। এরা একে-অপরের পরিপুরক। যারা বস্তিতে বসবাস করে তারাই অভিজাত এলাকায় গিয়ে কাজ করে। তাই দুই শ্রেণির লোকদের এখানে প্রয়োজন রয়েছে।
নব-নির্ধারিত ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি আগেও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল। এই ওয়ার্ডটি রাজধানীর অভিজাত ওয়ার্ড হিসেবে সুপরিচিত।
সীমানা: উত্তরে-নৌবাহিনী সদর দপ্তর এর প্রাচীর, দক্ষিণে-নিকেতন ও মহাখালী লেক, পূর্বে-গুলশান লেক, পশ্চিমে-রেললাইন।
অন্তর্ভুক্ত এলাকা: গুলশান ১ ও ২, নিকেতন (আংশিক), বনানী, কাকলী, চেয়ারম্যান বাড়ি, কড়াইল। (গুলশান-বারিধারা ব্রিজ থেকে গুলশান শুটিং ক্লাব, চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী, সমগ্র কড়াইল ও কড়াইল বস্তি) এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।
আয়তন: ২৫ বর্গকিলোমিটার প্রায়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি রাজধানীর অভিজাত ওয়ার্ডের মধ্যে অন্যতম। রাজধানীর বিশাল আয়তনের এই ওয়ার্ডে আছে দেশের বহু ভিআইপির আবাসস্থল। নামে আবাসিক এলাকা হলেও দিন দিনই এটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচ তারকা হোটেল, মার্কেট এবং অফিসের সংখ্যা বাড়ছে এই ওয়ার্ডে।
প্রসঙ্গত, এই ওয়ার্ডের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এখানকার অলিতে গলিতে বিশ্ববিদ্যালয়। বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ জুড়েই বহুতল সব ভবনের সমাহার। এখানে এক রাস্তার ধারেই রয়েছে অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পরপর রয়েছে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি), সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, এশিয়া ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ও রয়েল ইউনিভার্সিটি। অন্য পাশে রয়েছে এআইইউবি, নর্দার্নসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন।