জাগো লাইভ২৪.কম | আপডেট: 1:00 PM, July 12, 2020
Home» » একমাত্র মেয়ের আত্মহত্যার পরেই বদলে যান নায়ক শাহিন আলম!
একমাত্র মেয়ের আত্মহত্যার পরেই বদলে যান নায়ক শাহিন আলম!
বিনোদন: মেয়ের বয়স তখন আঠারো। কলেজের পরীক্ষায় খারাপ ফল করল। আবেগে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে পড়ল। রাতে ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন শাহিন আলম। মেয়ের সিলিংয়ে ঝোলার খবর শুনে ছুটে এলেন। দেখলেন মেয়ে তার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়লেন মানসিকভাবে, বদলে গেল একসময়ের তুখোড় চিত্রনায়ক শাহিন আলমের জীবন। ছেড়ে দিলেন অভিনয়। আগেই অভিনয়ের সঙ্গে টুকটাক গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন। সেটাকেই জীবিকা হিসেবে নিলেন। এখন তিনি পুরোদস্তর ব্যবসায়ী।
‘সিনেমা যখন পরিচালকদের হাত থেকে প্রযোজকদের হাতে চলে গেল, তখন থেকেই সিনেমার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল। প্রযোজকেরা আমার কাছে ভালগার শট দেওয়ার অনেক অনুরোধ করেছে। আমি করিনি। পরে তারা কাটপিস শুট করেছে। পর্দায় আমার ক্লোজআপ ব্যবহার করেছে। আমি ধরলে বলেছে, না করে উপায় নেই, ভাই। এসব দেখেশুনে অভিনয়ের নেশাটা কেটে গেল। আর নেশা না থাকলে পেশায় কতক্ষণ থাকা যায়?’ বললেন শাহিন আলম।
প্রায় দেড় শ ছবিতে অভিনয়ের পর শাহিন আলম ব্যবসায় মনোযোগ দেন। অভিনয়ের পাশাপাশি গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন। অভিনয় ছাড়ার পর পুরোপুরি সেখানেই মন দেন। কিন্তু গার্মেন্টসের ব্যবসায় সুবিধা করে উঠতে পারেননি। রাজধানীর গাউছিয়ায় তাঁদের পৈতৃক দুটো শোরুম ছিল। অভিনয় ছাড়ার পর এই শোরুমগুলোতে ব্যবসা শুরু করেন শাহিন আলম।
এদিকে, চার বছর ধরে গুরুতর অসুস্থ শাহিন আলম। জটিল কিডনি রোগে ভুগছেন। সাড়ে তিন বছর ধরে ডায়ালাইসিস চলছে। তার অসুস্থতার খবর খুব বেশি লোকের জানা নেই। শাহিন আলম বললেন, ‘অভিনয় ছাড়ার পর প্রথম দুই বছর অনেকে যোগাযোগ করত। যখন সবাই জেনে গেল, অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি, তখন আর তেমন কেউ যোগাযোগ করে না।’
শাহিন আলম জানালেন, সিনেমার লোকদের মধ্যে অমিত হাসান ও মিশা সওদাগর নিয়মিত তার খোঁজখবর নেন। অনেক দিন আগে শিল্পী সমিতির কয়েকজন তাকে দেখতে এসেছিলেন। কেউ কেউ তাকে বলেছেন, চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য শিল্পী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু শাহিন আলম তা করেননি। সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার জন্যও তদবির করেননি। অথচ তিনি গুরুতর অসুস্থ।
শাহিন আলম বললেন, ‘আমার মনে হয়েছে, যারা দুস্থ, আমার চেয়েও যাদের বেশি প্রয়োজন, তারা যাক। এত দিন আল্লাহ একভাবে চালিয়ে নিয়েছেন। সহায়তার কথা ভাবিনি। কিন্তু করোনায় ব্যবসার অবস্থা খারাপ। এখন চাইছি সরকার আমাদের দিকে তাকাক।’
গুলশানের নিকেতনে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন শাহিন আলম। স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার।
১৯৮৬ সালে নতুন মুখের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রবেশ করেন সিনেমায়। তখনই নজরে পড়েন ‘বে-দ্বীন’–খ্যাত নির্মাতা এস এম শফির। তিনি তার স্বপ্নের প্রকল্প ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে মাসুদ রানা হিসেবে নির্বাচিত করেন শাহিন আলমকে। সেই ছবির শুটিংয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে যান। তাঁর সহশিল্পী ছিলেন গোলাম মুস্তাফা, অলিভিয়া, ওয়াসীম ও রোজিনা। কিন্তু ব্যয়বহুল ছবিটির ৩০ শতাংশ শুটিং হওয়ার পর কাজ আর এগোয়নি।
মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টের জন্যই নির্মাতাদের কাছে তার চাহিদা বেশি ছিল বলে মনে করেন শাহিন আলম। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের বেদনাদায়ক সমাপ্তি ঘটে বিতর্কিত নায়িকা ময়ূরীর নায়ক হিসেবে পরিচিতি নিয়ে। ‘মাসুদ রানা’র উচ্চাভিলাষ নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তার শেষটা ভালো হয়নি।
শাহিন আলম অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি ‘ঘাটের মাঝি’, ‘এক পলকে’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘টাইগার’, ‘রাগ-অনুরাগ’, ‘দাগি সন্তান’, ‘বাঘা-বাঘিনী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আরিফ লায়লা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘অজানা শত্রু’, ‘গরিবের সংসার’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘আমার মা’, ‘পাগলা বাবুল’, ‘তেজী’, ‘শক্তির লড়াই’ ইত্যাদি।