Home»   » স্বাধীনতার ৫০ বছরেই অর্থনীতিতে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ৫০ বছরেই অর্থনীতিতে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

ঢাকা: গত ৫০ বছরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। যা অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয়। পাঁচ বছর আগেই মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। রিজার্ভ পৌনে ছয় গুণ বেশি। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি এখন ২৭ শতাংশ, আর পৌনে ৯ শতাংশ বাংলাদেশে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময় কমবেশি অস্থিরতা থাকায় দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এটি কোনোভাবেই সাহায্য করেনি। এদিকে নব্বইয়ের দশকের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একধরনের স্থিতিশীলতা ছিল, যা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পেরেছে। এই পার্থক্যই এগিয়ে নেয়েছে বাংলাদেশকে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গেমচেঞ্জার হলো পল্লি এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতুসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ। এসব অবকাঠামোই গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙা করেছে, যা সার্বিকভাবে আয় বাড়াতে সহায়তা করেছে।

তিনি আরও বলেন, নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একধরনের স্থিতিশীলতা ছিল। কৃষি, বাণিজ্য উদারীকরণ, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে কোনো সরকার সংস্কার করলে পরের সরকার এসে তা উল্টে দেয়নি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা এনেছে।

Advertisement
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৮০ টাকা, যা তৎকালীন ৯৪ মার্কিন ডলারের সমান। মাথাপিছু আয় ৫০০ ডলার ছাড়াতে ৩১ বছর সময় লাগে বাংলাদেশের। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় হয় ৫১০ ডলার। এক হাজার ডলার পেরোতে স্বাধীনতার পর থেকে ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৪ ডলার। পরের সাত বছরেই তা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে মাথাপিছু আয়। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়কে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় হয় ১ হাজার ৪৫৯ ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫১ ডলার। এভাবেই স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার।

পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (পিবিএস) তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশটির মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি কখনো স্থিতিশীল ছিল না। কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। পুরো সত্তরের দশকের সময়টি তাদের লাগে ২০০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ৩০০ ডলারে উন্নীত হতে। আশির দশকজুড়ে আরও এক শ ডলার বাড়ে মাথাপিছু আয়।

২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয় বেড়ে হাজার ডলার পেরোয়। আর গত দশ বছরে তা বেড়েছে মাত্র ৫০০ ডলারের কিছুটা বেশি। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৪৩ ডলার।

এখন বাংলাদেশ রপ্তানি আয়েও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে পাকিস্তান। এখন পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ রপ্তানি আয় বেশি বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় অপরিবর্তিত আছে। তবে কোনোটিই নেই দুই অঙ্কের ঘরে।

অন্যদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। দেশটির গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ৩৫ শতাংশ, শহরে ২৩ শতাংশের মতো ও গ্রামে প্রায় ৪৭ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি।

ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি মূল্যে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে রিজার্ভে টান পড়েছে সবার। তবে পাকিস্তানের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। পাকিস্তানের সর্বশেষ হিসাবে গত ফেব্রুয়ারি শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ কোটি ডলারে। অন্যদিকে পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় পৌনে ছয় গুণ বেশি রিজার্ভ আছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশে এক ডলার কিনতে খরচ করতে হয় ১০৫ টাকা। এক বছর আগে দাম ছিল ৮৬ টাকা। অন্যদিকে পাকিস্তানে ডলারের দাম ২৫৯ রুপি। এক বছর আগে দাম ছিল ১৭৬ রুপি। দুই দেশেই অবমূল্যায়ন হয়েছে স্থানীয় মুদ্রার।