জাগো লাইভ২৪.কম | আপডেট: 3:27 PM, May 19, 2023
অপহরণ করে অনলাইনে শিশু বিক্রি করতেন তারা!
ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে অপহরণ করা তিন বছরের একটি শিশুকে ২২ দিন পর গোপালগঞ্জ থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)।
র্যাব জানায়, শিশু সিদ্দিককে অপহরণের পর অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। পরে শিশুর নাম পাল্টে দুই লাখ টাকায় স্ট্যাম্প করে বিক্রি করে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ঢাকা ও গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শিশু অপহরণকারী চক্রের হোতা পীযুষ দম্পতিকে ও শিশুটির ক্রেতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- অপহরণকারী ব্যক্তি পিযূষ কান্তি পাল (২৯) ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), সুজন সুতার (৩২), পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) এবং তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬)।
শুক্রবার (১৯ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।
ঘটনার বর্ণানায় তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭-৮ শিশু কিশোর খেলা করছিল। এ সময় এক ব্যক্তি সব শিশুকে চকলেট খাওয়ায়।
একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলে তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দিব। শিশুটির বড় বোন যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলে। আর ছোট ভাই তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় হুমায়রা ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় চলে যায়।
ভুক্তভোগী শিশুর মা কাজ শেষে বাসায় এলে মেয়ে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। তাৎক্ষণিক ভুক্তভোগীর মা তার স্বামীকে জানায় এবং আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, পরবর্তীতে ২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। জিডির পর থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপহৃত শিশু উদ্ধারে তৎপর হয় র্যাব-২।
র্যাব-২ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, পর্যালোচনা, বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পিযূষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। পিযূষ দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির জন্য সুজন সুতার নামের ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যমতে অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সুজন সুতারের নিকটআত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছ থেকে অপহৃত শিশু সিদ্দিককে (৩) অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে ঢাকার সাভার এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের হোতা পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে আটক করা হয়।
আটক পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, পীযূষ কান্তি পাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন একটি স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন।
মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে পীযূষ কান্তি পাল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানবপাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলায় গ্রেফতারের পর তিনি কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়।
পীযূষ ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যেক্তা ফোরাম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। আটক সুজন সুতারের সঙ্গে ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান বলেন, পীযূষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বাচ্চা বিক্রির উদ্দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকে। ২৬ এপ্রিল পীযূষ কান্তি পাল সাভার এলাকা থেকে ১২টার দিকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসে। সাড়ে ১২টার দিকে শিশু সিদ্দিককে রাস্তায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে কোলে নিয়ে সিএনজি যোগে গাবতলি হয়ে সাভার তার বাসায় নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ওইদিনই রিদ্ধিতা পাল সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেয়। শিশু সিদ্দিককে প্রনিল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।
প্রমাণস্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করেন।
আটক সুজন সুতার জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাসের স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় সুজন সুতার পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত শিশু মো. সিদ্দিককে কিনে নেন। পরে ২৬ এপ্রিল রাতের বেলা সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ দিয়ে আসেন।