জাগো লাইভ২৪.কম | আপডেট: 1:52 PM, August 16, 2023
অপহরণ অতঃপর মুক্তিপণ আদায় করে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা
কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার হোসাইন আল মাসুম (৩৪) স্ত্রী জেসমিন আক্তার সিমাসহ ঢাকার বনশ্রীর এফ ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২২ নম্বর বাসায় থাকেন। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। কিন্তু, গেল মে মাসের ৩০ তারিখ তার জীবন একটি বড় মোড় নেয়। পূর্ব পরিচিত কয়েকজন কর্তৃক অপহৃত হন তিনি। তার উপর চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। এখানেই শেষ হলে পারত। তবে না। অপহরণের পরদিন তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে সেটি মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও রেহাই পায়নি সে। উল্টো অত্যন্ত ধূর্ত এবং পেশাদার অপরাধীদের সাজানো মামলায় আসামী হয়ে জেল পর্যন্ত খেটেছেন। কিন্তু দমে না গিয়ে, এখন আদালতের দারস্থ হয়েছেন ন্যায়বিচারের আশায়।
মাসুমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দায়ের হওয়া ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলা নং ৩২৮/২৩ এর নথি থেকে এই তথ্য জানা যায়। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, ৩০ মে রাত এগারোটার দিকে তার ঢাকার বাসার কাছে ফরায়েজী হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রীর (তৎকালীন সময়ে সন্তান সম্ভবা) কিছু মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে ফেরার পথে মাসুমের সঙ্গে মোঃ শামিম রহমানের দেখা হয়। এরপর সেখানে তাপসী নামের এক তরুণী আসে যাকে শামিম তার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মাসুম দুজনের কাছ থেকে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। অল্প কিছুদূর এগোতেই একটি নিশান এক্সট্রেইল এবং টয়োটা এক্স করোল্লা গাড়ি তার পথরোধ করে। মাসুমকে আশ্চর্য করে দিয়ে গাড়িগুলোর একটি থেকে বেড়িয়ে প্রথমে শামিম তার সামনে আসে। এরপর শামিমের নেতৃত্বে তাপসী, অপু, রিমা, হান্নান ও বাবুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে।
এই বিষয়ে মাসুম বলেন, ‘তাঁরা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে উঠায় এবং চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর আমার চোখ আর মুখ বেধে ফেলা হয়। তারপর আমাকে শামিমের নিকেতনের অফিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মামলার ২ নং আসামী ইফতেখার উদ্দিন টুটুল আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং এই সুজোগে তাপসী আমার দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ও নগদ ১৭,৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। এরপর আমাকে বেধরক মারধর করা হয়।’
মাসুম বলেন, এর কিছুক্ষণ পর শামিম আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবী করে। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে আবারও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমি আর সহ্য করতে না পেরে এবং জীবনের ভয়ে তাদের কথায় রাজী হই। এরই মধ্যে তারা আমাকে কতগুলো খালি স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই করায়। এরপর আমাকে আমার ফোনটা হাতে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন আমি টাকার বিষয়ে আমার পরিচিত বড় ভাই মোঃ ফরহাদ রেজাকে জানাই। সে অনুযায়ী তিনি পরদিন অর্থাৎ ৩১ মে সকালে তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে শামিমের একাউন্টে ৫ লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু তারা আরও টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমার স্ত্রী আমাকে নানা জায়গায় খোজাখুজি করে না পেয়ে ৩১ তারিখেই খিলগাও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে (জিডি নং-২৫১০)। এই বিষয়টি টের পেয়ে শামিম, টুটুল এবং তাদের লোকেরা আমাকে নিকেতন থেকে মুন্সিগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে অনেক মারধর করে। এরপর তারা আমাকে ২ জুন হাতিরঝিল থানায় এনে একটি বানোয়াট প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার করিয়ে দেয়। এই মামলায় আমি এক মাসের বেশী জেল খেটে ৪ জুলাই বের হই। এরই মাঝে ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তবে নিজেকে গুছিয়ে এখন ন্যায়বিচার পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছি। ইতোমধ্যে আদালত আমার মামলাটির দায়ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে দিয়েছে।