জাগো লাইভ২৪.কম | আপডেট: 12:58 AM, June 13, 2022
Home» » চট্টগ্রাম বন্দরে ২৬৫ কনটেইনার বিপজ্জনক কেমিক্যাল
চট্টগ্রাম বন্দরে ২৬৫ কনটেইনার বিপজ্জনক কেমিক্যাল
চট্টগ্রাম; চট্টগ্রাম বন্দর ২৬৫ কনটেইনার বিপজ্জনক কেমিক্যাল এবং বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে চরম ঝুঁকিতে। এ ছাড়া, বন্দরের শেডে রয়েছে আরও ৩৪২ মেট্রিক টন ধ্বংসযোগ্য কেমিক্যাল। বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর এসব পণ্য দ্রুত বের করে নিতে শুরু হয়েছে বন্দর এবং কাস্টমসের চিঠি চালাচালি।
গত ১৩ মে ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে কেমিক্যালভর্তি একটি কনটেইনারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা মেলে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন শেড এবং ইয়ার্ডে এ ধরনের ২৬৫টি কনটেইনার বছরের পর বছর পড়ে আছে।
বন্দরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডেই এক হাজার ৮১৮টি প্যাকেজের বিপরীতে ৩৪২ মেট্রিক টন কেমিক্যাল এবং বিপজ্জনক মালামাল রয়েছে।
মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পণ্য পড়ে থাকায় বন্দর ক্রমশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এসব কেমিক্যাল দ্রুত নিষ্পত্তি তাগিদ জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে, তারপরেও যে কোনো সময়ে একটি আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, যে কোনো সময়ে একটি বিস্ফোরণ হতে পারে। আমরা চাচ্ছি, বন্দরের অভ্যন্তরীণ, বিশেষ করে সংরক্ষিত এলাকার মধ্য থেকে এ মালামালগুলো যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয় বা যেভাবে নিষ্পত্তি হওয়া দরকার, সেভাবে হয়।
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে কাস্টমসকে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এতে ২৬৫টি কনটেইনার ভর্তি বিভিন্ন কেমিক্যালের কথা উল্লেখ করে দ্রুত নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কাস্টমসের সঙ্গে কাজ করার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যেহেতু এগুলো ধ্বংস করে, তাই তারা পর্যাক্রয়ে যেগুলো ধ্বংস করছে। এগুলো ধ্বংস করা অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া যে কোনো জায়গা এগুলো ধ্বংস করা যায় না। সিলেটে একটি নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে, যেখানে এসব দ্রব্য ডাম্পিং এবং ডিস্ট্রাকশনের ব্যবস্থা রয়েছে, কাস্টমস এগুলো সেখানে নিয়ে যায়।
এসব কনটেইনারে ক্ষতিকর নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, প্রোপাইনিক অ্যাসিডের পাশাপাশি অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট রয়েছে। কিন্তু আইনগত জটিলতায় বিপজ্জনক পণ্য নিলামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, দীর্ঘদিনের অনেক পুরাতন কেমিক্যাল যেগুলো আগে হয়তো নিলামে উঠেছে কিন্তু সময়মতো বিক্রি করা যায়নি। আমরা এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিলামে কেমিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যে আমদানি নীতি আদেশের বিভিন্ন শর্তাবলি থাকে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানিকারকের রিট মামলা থাকে, সুতরাং এগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের যত আন্তরিকতাই থাকুক না কেন আইনিভাবে এসব বিষয় নিষ্পত্তি করতে একটু সময় লাগেই। যেমন- অ্যাসিডের ক্ষেত্রে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আমদানিকারকের লাইসেন্স লাগবে। সেই দ্রব্য যখন নিলামে উঠানো হবে, তখন নিলাম ক্রেতাকেও এ লাইসেন্স দাখিল করে পণ্য খালাস নিতে হবে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে কেমিক্যাল অনেক সময় নিলামে উঠালেও, এ ধরনের শর্তাবলির কারণে চাইলে তাৎক্ষণিক আমরা নিলামে বিক্রি করতে পারি না।
তবে সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির পর ৫০ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পারঅক্সইড গত এক সপ্তাহে তিনটি নিলামে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ এ চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি রফতানি বাণিজ্যে ৯২ থেকে ৯৬ শতাংশ সম্পন্ন হয় এ বন্দর দিয়ে। তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বন্দর ঝুঁকিমুক্ত রাখার। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন নিলাম আইনের সংশোধন। এর মাধ্যমেই কেমিক্যালগুলো দ্রুত বিক্রি করে এ বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার কোনো বিকল্প নেই।